আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও মাথামুড়া নাচ।যা “সারা বিশ্ব জুড়ে নাচ” খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও মাথামুড়া নাচ

কল্পনাহীন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-নাচে গোলক বা চক্র বা বৃত্ত নাচের মত কেন্দ্রবিন্দু থাকে। প্রায়ই এই কেন্দ্রবিন্দুর সঙ্গে উৎসবের উপলক্ষ্যের অজ্ঞাত যোগাযোগ থাকে। নাচুয়েগণ যাদুকারী, বাদক, জীব-জন্তুর আকৃতি অথবা খাবারপূর্ণ টেবিল, অথবা শবাধারে রাখা শব, চিতা, মৃতের হাড়কে ঘিরে নাচে। উত্তর- ইউরোপে মানব সমাজের প্রথম ঊষা থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত এই প্রথা পালন করা হচ্ছে, ফিরো দ্বীপে এবং ডেনকার্কে কফিনকে ঘিরে নাচা হয় ।
বর্ণিওর ডায়াক নিজেদের মৌলিক প্রসঙ্গে নিজেরা কাজ করে। কফিনের জন্য নির্দিষ্ট গাছকে কাটার পূর্বে দুর্বল চিত্তের বয়স্ক দাসীকে তা আটবার প্রদক্ষিণ করে নাচ করতে হবেই । অনেক মাতৃতান্ত্রিক কৃষ্টিতে আট (৮) সঠিক সংখ্যা (প্লেট-১৬)। প্রায় এই সকল চক্র, গোলক বা বৃত্ত নাচের অর্থ হতে পারে মৃত এবং জীবন্তকে অপশক্তির আক্রমণের রক্ষাকবচ রূপে।
কিন্তু কৃষিভিত্তিক কৃষ্টির ধারণার পিছনের কারণ সম্ভবতঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রে জীবন্ত ও মৃতের মধ্যে হর্ষোৎফুল্ল নাচের মাধ্যমে বন্ধন রচনা করা এবং মৃত ব্যক্তির আত্মার পূর্ব-পুরুষের সন্ধান পাওয়া সম্ভব করে তোলা। এটা খুব পরিস্কার ভাবে বিবৃত যে, ধর্মে পূর্ব-পুরুষ পূজা সম্পূর্ণভাবে বদ্ধমূল চীনে এবং আরো প্রাচীন কৃষ্টির স্তরে:
ক্যালিফোর্ণিয়ার সাস্টা, কার্ক এবং ইউরোক যে নাচুয়েগণ একজন নারীকে ঘিরে চক্কর দেয় কিছুক্ষণ পরে মৃতের স্বপ্ন দেখা শুরু করে। একজন তরুণীর মৃত্যুকে যাদুর নাচে সবচেয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা হয়, এমনকি আমাদের নিজেদের সভ্যতায়। ১৮৪৬ খৃষ্টাব্দে গ্যালিলীতে একজন তরুণীর কবর দেবার সময় তার খেলার সাথীগণ দেখে পবিত্রভাবে নাচের মধ্যে হাত ধরে কবর প্রদক্ষিণ করছে।

প্রাচীন হল্যান্ডে তরুণগণ প্রায় এই গান গাইত :
বেহেস্ত পর্যন্ত উঁচু সেখানেও নাচ
আল্লেলুজা।
সেখানে সব ছোট কুমারীরা নাচে,
বেনেডিকামিউজ ডমিনোও,
আল্লেলুজা, আল্লেলুজা।
এই নাচ আমেলিয়ার জন্য,
আল্লেলুজা।
আমরা ঘুরে নাচি, আমরা ছোট মেয়ে,
বেনেডিকামিউজ ডমিনো,
আল্লেলুজা, আল্লেলুজা।
কুমারীদের বেহেস্তের নাচ যার গানের কথা প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করেছে সেটা ক্যাথলিক গীর্জার সঙ্গীতের থিম । কৃষি সভ্যতার শেষভাগে এবং মাথাশিকারী কৃষ্টির একটা অস্বাভাবিক উদাহরণ শবকে ঘিরে নাচা যা খুলি অথবা মাথার ছাল নাচ। এই নাচেরও উপলক্ষ্য জীবন্ত ও মৃতের মধ্যে সখ্যতা স্থাপন এবং পূর্ববর্তী মালিকের ক্ষমতার সঙ্গে সম্মিলিত হওয়া।
গোলক নাচের মধ্যে মাথা-শিকারী (অসভ্য জাতির মধ্যে শত্রুর মাথা জয়চিহ্ন স্বরূপ সংগ্রহকারী) খুব কাছ থেকে তাদের কার্যসিদ্ধী করে। নারী-পুরুষ যুগল শিকলে আবদ্ধ কখন নারী এককভাবে নাচুয়ে থাকে। প্রচলিত গোলক গঠনে আমি শুধুমাত্র একটা ব্যতিক্রম ঘটনা জানি।

নিউ গিনির স্পাইক জেলায় নারী-পুরুষ যারা ঘরে থাকে তারা মাথা-শিকারীদের ফিরবার পথে নৌকা নিয়ে আগায়ে আনতে থাকে। তখন তারা নৌকাতেই হাঁটু বাঁকায়ে পাছা দুলায়ে নাচতে থাকে তাদের লম্বা বৈঠা নাড়ায় ও বল্লম পানিতে খোঁচাতে থাকে। এটা কোনভাবেই মাথার যাদু না কিন্তু উৎসব মুখর অভ্যর্থনা নাচ বলা যায়। বন্দী শত্রুর মুন্ড ঘিরে নাচা আমাদেরকে পরবর্তী অধ্যায় যুদ্ধ নাচে নিয়ে যাবে ।
আরও দেখুনঃ
