আজকের আলোচনার বিষয়ঃ নৃত্যশিল্পী বালা সরস্বতী

নৃত্যশিল্পী বালা সরস্বতী
ভরতনাট্যমের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভাময়ী শিল্পী শ্রীমতী বালা সরস্বতী। নৃত্যগীতে ও অভিনয়ে ইনি সমান পারদর্শিনী। রাগ সঙ্গীতে নিপণে, কণ্ঠ সুষমায় সমদ্ধে ও অভিনয়ে দক্ষ এরূপ নৃত্যশিল্পী সচরাচর দেখা যায় না ।
এই গণে ইনি উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জন করেছিলেন। তাঁর মা জয়ল রা জয়মাও ( ১৮৯০-১৯৬৩ খৃ.) নিপণে ন ত্যগীত পটীয়সী ছিলেন। মাতামহী বীণা ধনম্ (১৮৬৭-১৯৩৮ খৃ.) ছিলেন তৎকালীন খ্যাতনাম্নী বীণাবাদিনী ও গায়িক। প্রমাতামহী সুন্দরমল ছিলেন তাঞ্জোর দরবারের রাজনর্তকী। এই ভাবে বংশ পরম্পরায় এরা ছিলেন সঙ্গীত-প্রাণ ১৯১৮ খৃষ্টাব্দের ১৩ই মে তদানীন্তন দেবদাসী পরিবারে বালা সরস্বতীর জন্ম।

বালা সরস্বতীর সঙ্গীত শিক্ষারম্ভ হয় চার-পাঁচ বছর বয়সে গল্প, কডপ- পন-এর (১৮৯১-১৯৪১ খৃ.) কাছে। তাঁর পরবর্তী গুরুদের নাম গৌরী অমল, চিন্নইয়া নায়ডু ও কাচাঁপাড়ি বেদাম, লক্ষ্মীনারায়ণ শাস্ত্রী। মাত্র ছ’-সাত বছর বয়সে বালা কান্তীভরনের ‘অমনাক্ষী অমন মন্দিরে’ ‘অরঙ্গটাম’ নিত্য-প্রদর্শন করে উপস্থিত গণী সঙ্গীতজ্ঞ ও সুধীজনদের চমৎকৃত করেছিলেন।
তখনো পর্যন্ত বৃত্তিভোগী নর্তকীদের, সমাজ খুব সুনজরে দেখত না। এখনকার মত তখন, এই নৃত্যে প্রদর্শনের যথাযোগ্য ব্যবস্থাও উল্লেখযোগ্য ছিল না। তাই বালা সরস্বতীর নৃত্যানাংঠানে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিচালনায় কিছুটা সংস্কার করা হয়। কণ্ডপপন ছিলেন এই ব্যবস্থার পুরোভাগে ।

১৯৩৪ খৃষ্টাব্দে শ্রীকৃষ্ণ আয়ারের প্রচেষ্টায় বারাণসীতে অননুষ্ঠিত নিখিল ভারত সঙ্গীত মহাসম্মেলনে নৃত্য প্রদর্শন করে বালা প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। কবির, রবীন্দ্রনাথও এই আসরে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। এর পরেই তিনি দেশ-বিদেশে তাঁর সাংস্কৃতিক অভিযান আরম্ভ করেন। ১৫৬১ খৃ. তিনি জাপানে ( টোকিও) অনষ্ঠিত পূর্ব- পশ্চিম সঙ্গীত সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৫২ খৃ. যান আমেরিকায়। ভারত সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রপতি পুরস্কার ও ‘পদ্মভূষণ’ দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করা হয়। বিশ্বভারতীর পক্ষেও তাকে ‘দেশিকোত্তমা’ উপাধি প্রদান করা হয় গত ডিসেম্বর ১৯৭৮।

শ্রীমতী বালা সরস্বতীর ‘বর্ণম’ (নাট্য, নত্তে ও নাত্যের সমন্বয় ) ও “পদ” (শৃঙ্গার রসাত্মক ভাবব্যঞ্জনা যুক্ত অভিনয় ) ছিল খুব বিখ্যাত। তাঁর আবেগ মধুর নাত্য-নৈপুণ্যে যাঁরাই প্রত্যক্ষ করেছেন, তারাই জানেন তিনি কত উচু দরের শিল্পী। আমেরিকার এক সঙ্গীত-সমালোচক বলেছিলেন : বালা সুন্দরী নন, কিন্তু তাঁর প্রথম মুদ্রাই রঙ্গমঞ্চে রূপ বদলে দেয়—এবং পূর্ণ নিষ্ঠা ও সমর্পণের ভাবটি মুহূর্ত’ হয়ে ওঠে।
শ্রীমান জন দিয়া-র ( Nanjundiah) সঙ্গে শ্রীমতী বালার বিবাহ গত ৯ই ফেব্রুয়ারী ‘৮৪, মাদ্রাজের এক হাসপাতালে তিনি দেহত্যাগ করেন। শ্রীসত্যজিত রায় ‘বালা’ নামে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি তোলেন। হয় ।
আরও দেখুনঃ
