আজকের আলোচনার বিষয়ঃ নৃত্যশিল্পী ঠাকুরপ্রসাদ

নৃত্যশিল্পী ঠাকুরপ্রসাদ
‘নটবরী’ নৃত্যের প্রবর্তক তথা ‘লখনৌ ঘরানার প্রথম নায়ক ঠাকুর প্রসাদের নাম কথক নৃত্যের কলাকার মাত্রেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। লখনৌ ঘরানার আলোচনা প্রসঙ্গে (প ১৬ দ্রষ্টব্য ) আমরা জেনেচি যে পরম কৃষ্ণভক্ত নৃত্যেসাধক ঈশ্বরীপ্রসাদের ইনি প্রপৌত্র। ঠাকুরপ্রসাদের পিতার নাম প্রগাসঙ্গী যিনি প্রথম লখনৌতে যান এবং নবাব আসাফউদ্দৌলার দরবারী কলাকার রূপে নিযুক্ত হন । আর প্রায় তখন থেকেই এরা লখনৌতে বসবাস আরম্ভ করেন স্থায়ী ভাবে।
ঠাকুরপ্রসাদ কিন্তু শ,ষ, পিতার গৌরবে গৌরবান্বিত হন নি। এরা তিন ভাই-ই ( যথাক্রমে দর্গাপ্রসাদ, ঠাকুরপ্রসাদ ও মান) পিতার সুযোগ্য শিক্ষাধীনে কথক নৃত্যে নিপণে ছিলেন। কিন্তু ঠাকুরপ্রসাদ স্বকীয় প্রতিভায় অধিকতর উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন।

কলাপ্রিয় লখনৌ-এর প্রখ্যাত নবাব ওয়াজিদআলী শাহ ঠাকুরপ্রসাদের প্রতি অকৃষ্ট হন এবং তাঁকে নৃত্যগর, রূপে বরণ করে শিক্ষা গ্রহণ করেন। শোনা যায়, গর দক্ষিণা স্বরূপে নবাব তাঁকে ছয় পাল, কী অর্থ প্রদান করেন। তাছাড়া তিনি তাঁকে ‘মহারাজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বলা যায়, তখন থেকেই নৃত্যশিল্পীরা নিজেদের নামের সঙ্গে ‘মহারাজ’ শব্দটি পড়ে যথেষ্ট আত্মশ্লাঘা বোধ করেন।
ঈশ্বরীপ্রসাদের অভ্যূদয়ের আগে থেকেই কথক নৃত্যের মান ক্রমশ নিম্নাভিমুখী হতে থাকে । তিনি শ্রীকৃষ্ণ ভগবানের স্বপ্নাদেশে এই নাত্যের পনের জীবনের চেষ্টায় ব্রতী হয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে কিন্তু তা সত্ত্বেও, ঠাকুরপ্রসাদের সময় পর্যন্ত নাত্যের অবস্থা বিশেষ রচনকির ছিল না। ঠাকুরপ্রসাদই এর উন্নতিকল্পে নতুন নামকরণ করলেন ‘নটবরী নৃত্য’ এবং লখনৌ ঘরানা নামে কথকের এক নতুন নাত্যঘরানার সংষ্টি করলেন ঊনবিংশ শতকে। তখন থেকে সেই নৃত্যধারা আজও প্রবহমান ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ।

ঠাকুরপ্রসাদের নৃত্যের নানা চমকপ্রদ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর ‘গণেশ পরণ’ দেখে দর্শকেরা স্তম্ভিত হয়ে যেতেন।
তিনি বিবাহ করেছিলেন কি না জানি না, (যতদূর জানি অবিবাহিতই ছিলেন ), কোন সন্তানাদি তার ছিল না। অগ্রজ দুর্গেপ্রিসাদের পত্রদের ( বিদাদিন, কালিকা ওভৈরোঁ ) তিনি পত্রাধিক স্নেহ করতেন। পরম যত্নে নৃত্যশিক্ষা দিয়েছিলন তাঁদের।
১৮৫৬ খৃষ্টাব্দে এই ক্ষণজন্মা শিল্পী লোকান্তরিত হন ।
আরও দেখুনঃ
