তাণ্ডব ও লাস্য

তাণ্ডব ও লাস্য
তাণ্ডব ও লাস্য নৃত্যের সংজ্ঞা জানবার আগে আমরা জেনে নিই যে, সংগীতেয়া প্রাচীন পণ্ডিতেরা এই দুটি নৃত্যশৈলী সম্বন্ধে কী মতামত ব্যক্ত করেচেন।
ভারতের নাট্যশাস্ত্র থেকে জানা যায় যে, তিনি এ দুটিকে পৃথক ভাবে স্বীকার করেন নি। তাণ্ডব সবন্ধে তিনি বলেচেন এটি শাঙ্গার রস থেকে সৃষ্ট এবং সুকুমার ও লীলায়িত গীতবিশিষ্ট।
পরবর্তী পণ্ডিতেরা এ দুটিকে পৃথক ভাবে বিচার করেচেন। তাঁদের বক্তব্যের সারমম’ এই যে, ‘যেন তোর দ্বারা বীর, বীভৎস, রৌদ্র প্রভৃতি রসকে অভিব্যস্ত করা হয়, তাই হ’ল ‘তাণ্ডব’। এটি প্রধানত পরেষেদের পক্ষে প্রযোজ্য। কারণ, এর মধ্যে এমন কয়েকটি ‘অঙ্গহার’ আছে, যা মেয়েদের ক্ষেত্রে অশোভন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে কয়েকজন পণ্ডিতের মতামত এখানে উদ্ধৃত করা হল।—

নন্দিকেশ্বর ( অভিনয়দপ’) বলেন যে-নত ‘নের করণ ও অঙ্গহারগুলি উদ্ধত এবং বাত্তি আরভট্টি, তাহাই ‘তাণ্ডব’।
শাঙ্গ’দেবও ( সঙ্গীত রত্নাকর ) এই কথাই বলেচেন। তাঁর মতে অঙ্গহারগুলির উন্নত প্রয়োগের নাম ‘তাণ্ডব’।
ধনঞ্জয় (দশরপেক ) বলেন: উদ্ধত নৃত্যে ‘তাণ্ডব’ এবং কোমল নৃত্যে ‘লাস্য’ ।…

নৃত্ত ও নৃত্যের সম্মিলিত প্রকাশ তাণ্ডব নৃত্য বিদ্যমান। তাণ্ডব নৃত্যের প্রকাশ নিয়েও মতানৈক্য আছে। একমতে এর প্রকার দুটি : পেবলী ও বহুরূপে।
“সঙ্গীত দামোদর”-এর মতে, তান্ডব তথা সব নতা- মড়াতে। পেবলিবহরেপেক্ষ ভাবাং দ্বিবিধং মতম ।।
অভিনয় ছাড়া কেবলমাত্র অঙ্গ বিক্ষেপের বাহুল্যে দ্বারা যে নতো প্রদর্শিত হয় তা’র নাম ‘পেবলি’ এবং নানা আঙ্গিক অভিনয় সহ প্রদর্শিত নতা ‘বহুরূপ’।
ভিন্ন মতে তিন প্রকার চন্ড, প্রচন্ড ও উচ্চন্ড।

লাস্য নৃত্যে থাকে শৃঙ্গার, করণ প্রভৃতি রসের ব্যঞ্জনা। কমনীয়তার প্রাধান্য থাকায় এটিকে প্রধানত নারীদের নৃত্য বলা হয়। অবশ্য ব্যাপকভাবে নরনারী নির্বিশেষে উভয়েই তাণ্ডব ও লাস্য নৃত্য প্রদর্শন করতে পারেন ।
তাণ্ডবের মত লাস্যেরও প্রকার দুটি ছরিত (দ্বৈত — duet ) যৌবত ( সমবেত — group ) ।
এ বিষয়ে ‘সঙ্গীত দামোদর’-এর উক্তি ঃ ছুরিতং যৌবততে লাস্যং দ্বিবিধমচাতে ।
উত্তম পরিচ্ছেদ ও ভূষণাদি দ্বারা সুজাত নটীদের মনোহারী নৃত্য হ’ল ‘যৌবত’ এবং অভিনয় সহকারে ভাবরসাশ্লেযাদি দ্বারা নায়ক ও নায়িকার ন,তাকে বলা হয় ‘ছরিত’।
আরও দেখুনঃ
