আজকের আলোচনার বিষয়ঃ নায়ক নায়িকা ভেদ

Table of Contents
নায়ক নায়িকা ভেদ
যত মান, ষ- তত চি চরিত্রের এই ভিন্নতা অবলম্বনেই সংগীতশাস্ত্রীরা নায়ক নায়িকার ভেদাভেদ নিরপেন করেছেন। কথক নৃত্য বিভিন্ন চরিত্রের নায়ক বা নায়িকার বর্ণনা করা হয় ভাব-অভিব্যক্তির দ্বারা। নাতো অবশ্য প্রধানত নায়িকা ভেদই প্রদর্শিত হয়। কিন্তু কোন কাহিনী বর্ণনার সময় অথবা নৃত্যনাট্য প্রদর্শনের সময় নায়ক নায়িকা নির্বিশেষে সমস্ত চরিত্রেরই বৈশিষ্ট বিশেষ মাসিয়ানার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে।
যেমন রাম রাবন ও হনুমান—এই তিনটি ভিন্ন চরিত্রের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করতে হলে, তাদের স্বভাব- চরিত্র, চলন-বলন, পোষাক-পরিচ্ছেদ ইত্যাদি সব ভালো ভাবে আত্মস্থ করা দরকার। এগুলি হ’ল নায়ক ভেদ। নায়িকা ভেদের ক্ষেত্রেও ঐ একই কথা প্রযোজ্য।
‘সংগীতদামোদর’ গ্রন্থে নত’ কাঁকেও পায় বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে পাত্র তিন প্রকার : খা—প্রথম যৌবনা, মধ্যা— মধ্য-যৌবনা ও প্রগলভা — তৃতীয়-যৌবনা। ঐ গ্রন্থ মতে নত’ক হল অসংবদ্ধপ্রলাপী, সব’দা ভ্রকুটী পরায়ণ, হাস্যাদিতে অত্যন্ত চতুর ও বাচাল। নত’কী বলা হয় জাতিবিশেষকে। নত্যাদি দ্বারা জীবিকা নির্বাহ এবং নানা অঙ্গভঙ্গি দ্বারা লোককে প্রলংন্ধ করে যে, তাকে বলা হয় নর্তকী।
নরনারী নির্বিশেষে সমগ্র মনষ্যকুলকে তাদের স্বভাব অনুসারে সাধারণ ভাবে তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছে। উত্তম, মধ্যম ও অধম ।
‘উত্তম’ বললে সাধারণতঃ উত্তমগুণে বিশিষ্ট বোঝায় । ব্যাকরণে ‘আমি বা ‘আমরা’ ছাড়া আর কেউ ‘উত্তম’ নয়। কিন্তু এখানে ‘উত্তম’ বলা হয়েছে তাঁকেই, যিনি সদাচার, সংযমী, সদানন্দ, সদালিপি, সদাশয়, মহৎপ্রাণ, ধীমান, উদারচেতা, স্থিরব, ধি, প্রাজ্ঞ ইত্যাদি গুনের অধিকারী ।
‘মধ্যম’ মানে মাঝামাঝি। এই শ্রেণীর মধ্যে পরেন তাঁরা, যাঁদের মধ্যে উত্তম-এর মত অতগুলি সদাগণে না থাকলেও, কলাপ্রিয়তা ব্যবহার কুশলতা, বুদ্ধির প্রাথর্ষ প্রভৃতি বিদ্যমান ।
‘অধম’-এর অর্থ পষ্ট । যার মধ্যে কোন গণেই নেই। অধিকন্তু পরশ্রীকাতরতা, ঈর্ষাপরায়াণতা, কপটতা, লাম্পট্য, দুষ্ট,দ্ধি, অভদ্রতা, হিংস্রতা, আত্মম্ভরিতা, সমাজবিরোধিতা প্রভৃতি অবগণেগুলি যার ভাষণ । এই হল সমগ্র নরনারীর সাধারণ চরিত্রবিভাগ। এবার দেখুন শধ্যে না ।

নায়ক ভেদ
নায়কদের প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ধীরোম্বত, ধীরোদাত্ত, ধীরললিত ও ধীরপ্রশান্ত ।
‘ধাঁরোধত’ পর্যায়ে পড়ে দুর্বিনীত, আত্মম্ভরী, ঈর্ষাপরায়ণ, কপট প্রভৃতি পরুষ বা নায়কেরা।
‘ধীরোদাত্ত’ নায়ক তারা, যারা নিরহংকার, গণগ্রাহী, উদারহৃদয়, বিচারশীল, স্থিতবন্দ্বি, যেকোন অবস্থায় অবিচল ইত্যাদি ।
‘ধীরললিত’ বলা হয় তাদের, যারা কলাপ্রেমিক, কোমল স্বভাব, মৃদুভাষী, আরামপ্রিয়, সুখী প্রভৃতি।
‘ধীর প্রশাস্ত্র’ নায়কেরা হয় শান্ত প্রকৃতির, সাত্ত্বিক, ধীর, প্রশান্ত, ক্ষমাশীল প্রভৃতি।

নায়িকা ভেদ
স্বকীয়া, পরকীয়া ও সামান্যা—এই তিনটি মধ্যে ভাগে নায়িকাদের ভাগ করা হয়েছে। এদের আবার উপবিভাগও আছে। যেমন—
১। স্বকীয়া নায়িকাঃ
পতিপরায়ণা, সুশীলা ও লজ্জাবতী নায়িকা । স্বকীয়া নায়িকার উপবিভাগ বা প্রকার ভেদ তিনটি—মুগ্ধা, মধ্যা ও প্রগলভা ( এটি অবশ্য পরকীয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ) ।
মুগ্ধো :
উদ্ভিন্ন যৌবনা, কোমলাঙ্গী, শঙ্গারাদিতে অনভিজ্ঞা নায়িকা ।
মধ্যা :
মধ্যযৌবনা ও শৃঙ্গোরাদিতে অভিজ্ঞা নায়িকা ।
প্রগলভা :
যৌবনমদমত্তা, শাজারাদিতে পারঙ্গম ও অকুণ্ঠিতা ।
২। পরকীয়া নায়িকা :
অন্যদীয়া (অপরের সহিত সন্ধ্য)।পরকীয়ার দুটি উপবিভাগ হল ঊঢ়া (বিবাহিতা) ও অনঢ়া (অবিবাহিতা )।
৩। সামান্যা নায়িকা :
লোভ, দঃসাহসিকতা, কুটীলতা প্রভৃতি অবগুণেই যার স্বধর্ম’ । কোন কোন পণ্ডিতেরা এই শ্রেণীর নায়িকাকে গণিকা রূপেও চিহ্নিত করেন।

সামান্যা নায়িকার উপবিভাগ বা উপভেদ দশটি—
(ক) স্বাধীনভর্তৃকা ( বা স্বাধীনপতিকা) :
পতিকে বশীভূত রাখার আনন্দে সদা প্রসন্নময়ী নায়িকা। [ “স্বাধীনভর্তৃকা কেবা সমান তোমার ।” —অন্নদামঙ্গল।
(খ) বাসক সজ্জা :
নায়কের আগমন প্রত্যাশায় মুসঙ্গিতা নায়িকা ।
(গ) বিরহোৎকণ্ঠিতা :
প্রেম বিরহে উৎকণ্ঠিতা নায়িকা ।
(ঘ) খণ্ডিতা :
পরনারী সঙ্গের চিহ্নাদিযজ্ঞে নায়ক দর্শনে কুপিতা বা ঈর্ষান্বিতা নায়িকা ।

(ঙ) কলহান্তরিতা :
নায়কের সঙ্গে কলহজনিত বিচ্ছেদ-বেদনায় অনুতপ্ত নায়িকা ।
(চ) বিপ্রলম্বা :
প্রতারিত নায়িকা। অর্থাৎ পূর্বে নির্বাচিত স্থানে নায়কের সাক্ষাৎ-বঞ্চিত। [ “সংকেত স্থানেতে গিয়া নাহি পায় পতি। বিপ্রলম্বা তারে বলে পণ্ডিত সুমতি ।– ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর।
(ছ) প্রোষিতভর্তৃকা (প্রোষিতপতিকা)ঃ
প্রবাসী পতির জন্য কাতরা নায়িকা। [ “পরবাসে গতি যার মলিনা বিরহে। প্রোষিতভর্তৃকা তারে কবিগণ কহে । – রসমঞ্জরী।]
(জ) অভিসারিকা :
নায়কের সহিত মিলনের জন্য সংকেত স্থানে গমন-কারিণী নায়িকা। [প্রিয়ের মিলন আশে কুঞ্জেতে গমন। সঙ্কোচ- পূর্বক, অভিসারের লক্ষণ । ‘ — ভাল । ]
(ঝ) আগতপতিকা :
প্রবাস প্রত্যাগত পতির জন্য উল্লসিত নায়িকা
(ঞ) প্ৰহস্যপতিকা :
পতির প্রবাস গমনের সংবাদে ব্যাকুলা নায়িকা । এই দশম (ঞ) প্রকার উপভেদটি “কথক নৃত্যে ” ( হাথরস ) গ্রন্থ ব্যতীত আমার জানা আর কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় নি। সম্ভবত এটি পরে নতোবিশারদগণ কর্তৃক প্রদত্ত হয়েছে।
কুশলী কথক-নৃত্যশিল্পীরা নিপুণতার সঙ্গে এই নায়িকা ভেদগুলি প্রদর্শন করেন।
আরও দেখুনঃ
