আজকে আমরা আলোচনা করবো চব্বিশটি তালের পরিচয় এবং ঠেকা ( আড় লয় পর্যন্ত ) সম্পর্কে

Table of Contents
চব্বিশটি তালের পরিচয় এবং ঠেকা ( আড় লয় পর্যন্ত )
তাল হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়কে নির্দিষ্ট ক্ষুদ্রভাগে ছন্দবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে তাল যন্ত্রে বাদনের মধ্য দিয়ে তার পুনরাবৃত্তি ঘটানো। প্রকৃতিতে আমরা যা কিছু অবলোকন করি তার সবকিছুই ছন্দবদ্ধ ভাবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘটে চলেছে অর্থাৎ সবই তালবদ্ধ।
তালের নির্দিষ্ট মাত্রা সমষ্টিকে কতকগুলি ছোট বা বড়, সমান বা অসমান বিভাগ এ বিভক্ত করা হয়। এই বিভাগ দুই বা ততোধিক মাত্রার হতে পারে।

১। দাদরা
এটি ছ’ মাত্রার তাল বিভাগ দুটি। প্রতি বিভাগে তিনটি করে মাত্রা থাকে। তালি একটি (১ মাত্রায়), খালি একটি ( ৪ মাত্রায় ) ।


২। ভেওড়া
মাত্রা ৭ বিভাগ ৩। তালি ০ (১, ৪ ও ৫ মাত্রায় )। এতে খালি নেই ।


৩। রূপক
এটিও তেওরার মত ৭ মাত্রা ও বিভাগের তাল । তবে এর ১ম মাত্রাতেই খালি এবং পরের বিভাগ দুটিতে তালি পড়ে।

৪। কাফা বা কাহারোয়া
মাত্রা ৮। বিভাগ ২। তালি ১ (১ মাত্রার)। খালি ১ (৫ মাত্রা)।


৫। ধুমালী
আট মাত্রার এই তালটির সঙ্গত হয় ঠুমরী গানের সঙ্গে। এর বিভাগ সম্বন্ধে মতানৈক্য আছে। কেউ মানেন চারটি বিভাগ কেউ বা দুটি বিভাগ নিয়ে মতভেদ থাকলেও, ঠেকার বোল উভয় মতেই এক। এখানে চারটি বিভাগ দেখানো হ’ল ।— মাত্রা ৮। বিভাগ ৪। তালি ৩ ( ১, ২ ও ৭ মাত্রায় ) । খালি ১ ( ৫ মাত্রায় ) ।

ধুমালীর আরেক প্রকার দেখা যায়, যার মাত্রা সংখ্যা ৭। ঠেকা দেখুন –

৬। ঝাঁপতাল
ধ্রুপদ ও খেয়াল দরকম শৈলীর গানেই এর সঙ্গত চলে। স্বরফাক্তা তালের মত এরও ১০টি মাত্রা কিন্তু দুটির ছন্দ ভিন্ন। ঝাঁপতালকে বিষম ছন্দের ভাল বলা হয়। বিভাগ ৪। তালি ৩ (১,০ ও ৮ মাত্রায়)। খালি ১ ( ৬ মাত্রায় ) ।


৭। পুরষ্কাতা বা মূলভাল
এই ১০ মাত্রার তালটিও প্রধানতঃ পাখোয়াজেরই তাল। বিভাগ ৫। তালি ৩ ( ১, ৫ ও ৭ মাত্রায় ) । খালি ২ (০১ মাত্রায় ) । একে ফুলফাঁকও বলেন অনেকে।


৮। রুদ্রতাল
এই তালটিকে ১১, ১৫, ১৬ ও ১৭ প্রভৃতি বিভিন্ন মাত্রায় দেখা যায় । এখানে কেবল ১১ মাত্রার রূপটিই দেখান হচ্চে। মাত্রা ১১। বিভাগ ৮। তালি ( ১, ৩, ৪, ৫, ৭, ৮, ৯ ও ১০ মাত্রায় ) ।


৯। একতাল
এর মাত্রা-সংখ্যা, বিভাগ, তালি, খালি, ইত্যাদি সবই চৌতাল-এর মত । তফাৎ শুধু বোল-এর। চৌতালের চাইতে এর গাম্ভীর্ষ কম এবং এটি তবলাতেই বাজে ।

এর অন্যান্য লয়কারী ঠিক চৌতাল-এর নিয়মে করতে হবে। দ; ‘রকমের একতাল আমরা শুনতে পাই, একটি বিলম্বিত, অপরটি মধ্য বা দ্রুত লয়ের। ওপরের ঠেকাটি মধ্য বা দ্রুত লয়ের মধ্য লয়েরও দরকম ছন্দের ঠেকা শোনা যায় — দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ছন্দ। অর্থাৎ দুই মাত্রা বিশিষ্ট বিভাগ ও তিন মাত্রা বিশিষ্ট বিভাগ। ওপরে দ্বিমাত্রিক ছন্দ দেওয়া হয়েছে।
১০। চৌতাল
মাত্রা ১২। বিভাগ ৬। তালি ৪ ( ১, ৫, ৯ ও ১১ মাত্রায় ) । খালি ২ ( ৩ ও৭ মাত্রায় ) । এটি পাখোয়াজের তাল। গ্রুপদের সঙ্গেই সঙ্গত করা হয়। আজকাল অবশ্য তবলাতেও বাজানো হচ্চে কিন্তু পাখোয়াজেই এর বৈশিষ্ট্য বেশি প্রকাশ পায়।

১১। আড়াচৌতাল
মাত্রা ১৪। বিভাগ ৭। তালি ৪ ( ১, ৩, ৭ ও ১১ মাত্রায় ) । খালি বা ফাঁক ৩ (৫, ৯ ও ১০ মাত্রায় ) ।


১২। ধমার
এটিও পাখোয়াজের তাল। হোরী বা ধমার গানের সঙ্গে বাজানো হয় । পাখোয়াজের অভাবে তবলাতেও আজকাল বাজানো হচ্চে, তবে এর বৈশিষ্ট্য পাখোয়াজেই বেশী পরিস্ফুট হয়। একে বিষম ছদের তাল-ও বলা হয়। মাত্রা ১৪। বিভাগ ৪ । তালি ৩ (১, ৬ ও ১১ মাত্রায় ) । খালি ১ ( ৮ মাত্রায় )।


১৩। দীপচন্দী
মাত্রা সংখ্যা ১৪ । বিভাগ ৪। তালি ৩ (১, ৪ ও ১১ মাত্রায় ) । খালি ১ ( ৮ মাত্রा ) । একে চাঁচর তালও বলা হয় । তাছাড়া অনেকে এটিকে ৭ মাত্রার যৎ-ও বলেন। ঠুমরী ও অন্যান্য সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গত করা হয় ৷


১৪। ঝুমরা
এটির মাত্রা-সংখ্যা ১৪। বিভাগ, তালি ও খালি সব দীপচন্দীর মত। তফাৎ শধ, ঠেকার বোল এবং ছন্দে ।

১৫। ব্ৰহ্মতাল
এই তালেরও দু’ রকম মাত্রা-সংখ্যা মানা হয়- ১৪ ও ২৮ । এখানে কেবল ১৪ মাত্রার প্রকারটি দেখানো হল। মাত্রা ১৪। বিভাগ ১৪। তালি ১০ ( ১, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ মাত্রায় ) । খালি ৪ ( ২, ৫, ১ ও ১৪ মাত্রায় ) ।


১৬। পঞ্চম সওয়ারী
মাত্রা ১৫ । বিভাগ ৪। তালি ৩ ( ১, ৪, ও ১২ মাত্রায় ) । খালি বা ফাঁক ১ ( ৮ মাত্রায় ) ।


১৭। ত্রিতাল
মাত্রা ১৬। বিভাগ ৪। তালি ৩ ( ১, ৫ ও ১৩ মাত্রায় ) । খালি ১ ( ১ মাত্রায় ) । [মলে ঠেকা ।। ঠায় লয় ]


১৮। যৎ
এই তালটির মাত্রা বিভাগ ইত্যাদিও ত্রিতালের মত, তফাৎ শুধু বোলের। ঠুমরীর সঙ্গেই এই তাল বাজে । অনেকে এটিকে ৬ মাত্রার যত্ বলেন এবং সেই হিসেবে ৮ মাত্রার মধ্যেই এক আবর্ত’ বাজান।

১৯। অন্ধা
মাত্রা ১৬। বিভাগ ৪। তালি ৩ (১, ৫ ও ১৩ মাত্রায় ) খালি ১ (১ মাত্রায়)। একে সিধারখানীও বলা হয়।

বলাই বাহুল্য, এর বিভিন্ন লয়কারীও ত্রিতালের মতই হবে। তাই পৃথক ভাবে দেখানো হ’ল না ।
২০। বড় সওজারী
ষোল মাত্রার এই সওআরী (বা সোয়ারী ) তালটিকে “বড় সওয়ারী” বলা হয়। সেই হিসেবে পঞ্চম সওয়ারীকে বলা হয় “ছোটী সওমারী”। মাত্রা ১৬। বিভাগ ৮। তালি ৫ ( ১, ৫,১, ১১ ও ১৩ মাত্রায় ), খালি ৩ ( ৩, ৭ ও ১৫ মাত্রায় ) ।


এই তালের লয়কারী না দিলেও আশা করি আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না। নিজেরাই করে নিতে পারবেন ।
২১। লক্ষ্মী তাল
এই তালের মাত্রা সংখ্যা নিয়েও মতানৈক্য আছে । কেউ মানেন ১৮ মাত্রার, কেউ বা ৩৬। এখানে ১৮ মাত্রাই দেখান হ’ল । এটি প্রধানত পাখোয়াজের তাল কিন্তু তবলাতেও বাজে। এখানে তবলার ঠেকা দেওয়া হচ্চে –


২২। সরস্বতী তাল
মাত্রা ১৮। বিভাগ ৫ । তালি ৫ (১, ৫, ৭, ১১ ও ১৫ মাত্রায় ) । খালি নেই ।
অন্যান্য লয়কারী পৃষ্ঠান্তরে প্রদত্ত ১৮ মাত্রার অন্য তালের নিয়মে হবে ।

২৩। অর্জুন তাল
মাত্রা ২০। বিভাগ ৭। তালি ৭ ( ১, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৫ ও ১১ মাত্রায় ) খালি নেই।
এরই আরেকটি প্রকার আছে ২৪ মাত্রার। তা’র বিভাগ ১; তালি ১ খালি নেই। এখানে ২০ মাত্রার প্রকারটি দেওয়া হ’ল।

২৪। গণেশ তাল
মাত্রা ২১। বিভাগ ১০। তালি ১০ ( ১, ৫, ৬, ১০, ১১, ১২, ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ মাত্রায় )। খালি নেই ।

আরও দেখুনঃ
