আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – ক্ল্যাসিক যুগ রোম।যা “যুগ যুগব্যাপী নাচ” খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।
ক্ল্যাসিক যুগ রোম

“কোন মার্জিত ব্যাক্তি নাচে না” (nemo feresaltat sobrius no sober person dances) সিসিরোর (CICERO) মন্তব্য যুক্তিবাদীদের পূর্ণাঙ্গ অবমাননার বিশদ বিবরণ দেয় যেখানে আর্টের জন্য হর্ষোল্লাসের কোন ধারণক্ষমতা নাই যেটা শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তির শুষ্ক অঞ্চলের চেয়ে ঐ ভূমিতে অধিক সমৃদ্ধশালী। সত্যি বলতে কি রোমান নাচের ইতিহাস নিষ্প্রাণেরও অধিক। এটা খুব সহজে তিন বিভাগে পড়ে।
প্রথমটা, পুরান রোমান কালে আমাদের আছে নির্দিষ্ট পৌর-সভার সংঘবদ্ধ নাচ : বীজবপনের বসন্ত শোভাযাত্রায় মাঠের পবিত্রতার জন্য পুরোহিত, যোদ্ধাদের অস্ত্র-নাচ এবং মার্সের পুরোহিত যারা একত্রে Salii নামে দলভুক্ত ছিল, যা saltabntes অথবা নাচুয়েদের সমপর্যায়ের।
প্রকৃতপক্ষে এই সকল দলবদ্ধ গায়কদের সম্বন্ধে খুব অল্পই নাচ আছে, যদিও প্লুটার্চ তাদের লাবণ্যের এবং নমনীয় অঙ্গভঙ্গিগুলির প্রশংসা করে। Salii পদাঘাত করে “রজকের মত” তিন বিটের গানের ধুয়ার মধ্যে যাতে হয়ত মনে করা হয় তিন অক্ষরযুক্ত ছন্দ বিদ্যমান।
এই তিন পা আছে এমন বৈশিষ্ট্যের জন্য নাচের নাম নেয় ত্রিপাডিয়াম। প্রকৃত সংঘবদ্ধ-নাচের মত এটার একজন নাচের নেতা থাকে যার অঙ্গভঙ্গি জবাবিত হত দুই প্রবীণ ও তরুণ দলবদ্ধ পুরুষের দল দ্বারা যেমন তারা গোল হয়ে ঘুরে হাঁটে সিল্ডগুলির আঘাতের তালে তালে। সুষ্পষ্টভাবে আমাদেরকে অবশ্যই সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ অনুমান করতে হবে : অন্যথায় লুসিয়ান ত্রিপুডিয়ামকে নাচের মধ্যে সবচেয়ে রাজোচিত বলতে পারতেন না।
প্রায় ২০০ খৃঃপূঃ রোমান নাচের ইতিহাসের দ্বিতীয় বিভাগ শুরু হয় : ইসকান এবং গ্রীক করিওগ্রাফি প্রবিষ্ট হয়, ইতিপূর্বের চেয়ে জনসাধারণের জীবনে নাচ একটা বৃহত্তর ভূমিকা রাখে এবং ব্যক্তিগত জীবনে ফ্যাশানে পরিণত হয়-এমনকি অভিজাত সম্প্রদায় তাদের ছেলেমেয়েদের নাচেরস্কুলে পাঠায়।

সম্ভবতঃ নাচ প্রথমবারের মত “সামাজিক” অর্জিত গুণরাজি হয়ে উঠে। রক্ষণশীলদের সতর্কবাণী এবং এটার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচারণ সব গোল্লায় যায় ঃ প্রায় ১৫০ খৃঃপূঃ সিপিও এমিলিএনাস আফ্রিকানাস বৃথায় নাচের স্কুল বন্ধ করে দেয়। রোম একটা আর্টদ্বারা অবরূদ্ধ হয়ে আছে যেটা বৈদেশিক ভাবে তার অন্তঃস্থ প্রকৃতির মধ্যে অবস্থান করে (প্লেট-১৩)।
তৃতীয়ভাগ সম্রাটকে নিয়ে । এটা ইস্কান, গ্রীক ও প্রাচ্যদেশীয় নাচ দ্বারা স্বীকৃত প্রধান্যে চিহ্নিত এবং বিশেষ করে পরিপক্ক গ্রীক মূখাভিনয়, নাটকীয় বাকহীন কর্মকান্ড ।এই নাচ প্রাচ্যদেশীয় অনুকরণাত্মক নাচের হুবহু অন্য অংশ। এখানে সেখানকার মতন পুরাণকথা আত্মস্থ ও পরিবেশিত হয় নাচের মত করে।
লুসিয়ান বলেন “নাচুয়ের প্রধান কর্তব্য হল অবিরাম বয়ে নেয়া, যেমন আমি বলেছি তার প্রাচীন গল্পের উপর অপরাজেয় স্মরণ শক্তি আছে, স্মৃতিশক্তি অবশ্যই রুচি ও বিবেক দিয়ে সমর্থন করবে। তাকে অবশ্যই বিশ্বের ইতিহাস জানতে হবে, সেই সময় থেকে যখন প্রথম ক্যয়োসের ঊষালগ্নে উন্মেষ হতে থাকা দিন থেকে মিশরীয় ক্লিওপেট্রা পর্যন্ত।
মূখাভিনয়ের প্রসস্থ জ্ঞানের ক্ষেত্রে এইসকল সীমাবদ্ধতা আমরা স্বীকার করে নিব, কিন্তু তাদের মধ্যে তাকে অবশ্যই প্রতিটির সঙ্গে বিশদ পরিচিত হতে হবে…. ..যতক্ষণ এটা অনুকরণ করা তার পেশা এবং আকার ইঙ্গিতের দ্বারা তার বিষয়কে অগ্রে দেখান, তাকে বক্তার মত, অবশ্যই আবেগময় ভাষণের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, দোভাষীর সাহায্য ছাড়াই প্রতিটি দৃশ্য অবশ্যই বুদ্ধিদীপ্ত করতে হবে; পাইথিয়ান (এপোলো, রোমান সূর্য দেবতার দৈববাণী এবং ডেলফি মন্দিরের যাজিকাগণ) দৈববাণীর বহিপ্রকাশ ধার করতে হবে।
যদিও সে বোবা হবে এবং বাহীন, সে শুনতে পায় দর্শকদের দিয়ে।” নীরোর (রোমান সম্রাট) সময় একবার সাইনিক ডিমিত্রিয়াসের সামনে মূখাভিনয় নাচা হয় : “তাল- যন্ত্রসমূহ, বাঁশীগুলি এমনকি সমবেত গানের দলকেও কঠোর নিরবতা পালন করতে আদেশ দেওয়া হয় এবং মূখাভিনয় তার নিজের সম্পদ পরিত্যাগ করে প্রতিনিধিত্ব করে।
অ্যারেস ও আফ্রোদিতির প্রেমলীলা, গোপন কথা ফাঁস করে দেয়া সূর্য, হেফেস্টাসের কৌশল জ্ঞান, তার জাল দিয়ে দুই মিথুন-যুগলকে বন্দীকরা, ঘিরে থাকা দেবতাকূল, প্রত্যেকে নিজের পালায়, আফ্রোদিতির আরক্তিম হওয়া, অ্যারেসের বিব্রতকর অবস্থা, তার অনুনয়-বিনয়-বলতে গেলে সমস্ত গল্পই ।
ডিমিত্ৰিয়াস প্রদর্শনীতে বলৎকার ছিল; সেখানে কি অন্য কোন উঁচুদরের প্রশংসা ছিল না যা দিয়ে সে অংশগ্রহণকারীদের পুরস্কৃত করতে পারত। ‘মানুষ’ সে তার কন্ঠস্বরের উঁচুতে তীব্র চিৎকারে বলে ‘ এটা দেখা যায় না, কিন্তু শুনা যায় ও দেখা যায় : উভয়ে ‘ইহা তদরূপ যদি তোমার হাতগুলি জিব্বা হয়ে যায়!”
লুসিয়ান আরো বলেন “পন্টাস রাজপরিবারের একজন বিদেশী সেই আর্টের গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন, যে সম্রাটের কাছে এক ব্যাপারে সাক্ষাৎ করতে আসেন এবং সেই একই মূখাভিনয় দেখার দর্শকদের মধ্যে ছিলেন। শিল্পীদের দেহভঙ্গিমা ও বিষয়বস্তু উপস্থাপনা এমন বুদ্ধিদীপ্তময় ছিল যে এমনকি কেউই (অর্ধেক গ্রীক) সমবেত কন্ঠের গান বুঝতে না পারলেও হৃদয়ঙ্গম করে ছিল।
যখন তিনি দেশে ফেরার পথে, সম্রাট নীরো তার কাছে বিদায় নিলে সম্রাট প্রস্তাব রাখেন তার কি উপহার পছন্দ যা তিনি আশ্বাস দেন অনুরোধে প্রত্যাখান করবেন না। পন্টিয়ান বলেন ‘অন্য যে কোন উপাহারের চেয়ে আমাকে অধিক আনন্দদেবে আপনার শ্রেষ্ঠ মূখ-অভিনেতা, আমাকে দিলে।’
সম্রাট জিজ্ঞাসা করেন ‘পন্টার আপনার কাছে এটা কি কাজে লাগবে? ‘আমাদের বিদেশী প্রতিবেশী আছে যারা আমাদের ভাষা বলতে পারে না এবং দোভাষী নিয়োগ খুব সহজ ব্যাপার না। আপনার মূখঅভিনেতা যতবারই প্রয়োজন পরে সে তার আকার-ইঙ্গিতে সে কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে।’ তিনি অসাধারণ স্বচ্ছ মূখাভিনয়ের প্রতিফলনে গভীর ভাবে অভিভূত হয়েছেন।”

এই মূখাভিনয় আর্টের বিজয় অগ্রযাত্রা খুবই তাৎপর্যময়। রোমানরা নাচে খুব কম জড়িত থাকে অথবা তাদের কোন আগ্রহ আছে, গভীর আগ্রহে তারা অনুকরণাত্মক নাচ খুবই উপভোগ করে যদিও তাতে তারা অংশগ্রহন করে না। নাচ হর্ষোচ্ছাস স্বরূপ, বর্দ্ধিষ্ণু জীবনের শিল্পসুলভ প্রতিবন্ধকতা, অবশ্যই মার্জিত, বাস্তবসচেতন রোমান মনে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মীরূপে অবস্থান করে; সে সেই নাচকে ধারণ করে যা চিন্তার খোরাক যোগায় ।
আরও দেখুনঃ
