আজকে আমরা কথক শিল্পীর বেশভূষা ও রূপসজ্জা সম্পর্কে আলোচনা করবো

কথক শিল্পীর বেশভূষা ও রূপসজ্জা
কথায় বলে, “পহলে দর্শনধারী, পীছে গুণ বিচারী”। প্রথম দর্শনেই যদি শিল্পী দর্শকদের মনকে তাঁর দিকে আকৃষ্ট করতে না পারেন, তাহলে তাঁর কলা প্রদর্শন দ্বারা দর্শকদের চিত্তহরণ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, কিন্তু তা নেহাৎই ব্যতিক্রম। তাই মত প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ‘শোম্যানশিপ’টা খুবেই বর্ণে। মধ্য সজা, নেপথ্য সংগীত প্রভৃতির সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীর বেশভূষা ও রূপা ( costume & make-up ) দর্শকদের চিত্তাকর্ষণের পক্ষে খুবই সহায়ক ।
আমরা জেনেচি যে কথক নৃত্যের ইতিহাস অতি প্রাচীন। কিন্তু সেই প্রাচীনকাল থেকে এ পর্যন্ত তার কলাকৌশল ও আঙ্গিকের সঙ্গে বেশভাষারও বিবর্তন ঘটেচে । বর্তমানে আমরা কথক শিল্পীদের যে বেশভাষায় দেখি, তা সেলিম প্রভাবে প্রভাবিত চুড়িদার পাজামা, শেরোয়াণী বা বিশেষ ধরণের পাঞ্জাবী, পাঞ্জাবীর ওপর কারুকার্য করা ওয়েস্টকোট, অথবা ওড়না যা চাদর মাথায় মার্টিন অথবা জরি-চুমকির কাজ করা লখনোই টুপি- এগুলি সবই মুসলিম যুগের অবদান।

অনেকে আবার রঙীন বেনারসীও পরেন মালকোঁচা দিয়ে। জামা গায়ে দেন না কিন্তু উত্তরীয় ব্যবহার করেন। এই ধরণের পোষাক হিন্দুত্বের পরিচায়ক।
নৃত্যোঙ্গনাদের সাজ-সজ্জায় শাড়ী ও ব্লাউজই প্রধান । শাড়ীর নিচে অন্তবাস হিসেব ‘ট্রাউজার’ বা চুড়িদার পাজামা থাকে। অবশ্য চুড়িদার পাজামা, ঘাগরা দেওয়া ফুল পাঞ্জাবী, ওড়না বা হাতকাটা ও কেখোলা জ্যাকেটও পরেন অনেকে।
পোষাকের রঙ নির্বাচনে শিল্পীকে খুব সতর্ক হতে হবে। প্রথমেই মনে রাখতে হবে, সকলকে সব রঙের পোষাক মানায় না। আবার এমন জমকালো পোষাক পরিধান করা উচিত নয়, যা শিল্পীর ব্যক্তিত্ব ও প্রদর্শন- কৃতিকে আচ্ছন্ন করে রাখে নিপীর সুচি ও সৌন্দর্যবোধের পরিচয় যেন তার পোষাক-পরিচ্ছদের মাধ্যমে বোঝা যায় ।

বেশভাষার ব্যাপারে দর্শকদের রচির কথাও মনে রাখা কর্তব্য। আজকাল কোন কোন ননৃত্যাঙ্গনাকে এরূপ পোষাকেও দেখা যায়, যে আদৌ সুরুচিসম্মত নয় । মনে হয়, তাঁরা তাঁদের নত্য-চাতুর্য অপেক্ষা পোষাকের আড়ম্বর দিয়েই দশক-চিত্তকে আকর্ষণ করতে বিশেষ প্রয়াসী। হয়ত কিছ দশ ক এই দুটি বিগহিত পোষাকে আনন্দলাভ করেন, কিন্তু কোন ान দর্শকই এরূপ পোষাকের প্রশংসা করেন না। বেশভা অবশ্যই আনিক রুচি-সম্পন্ন হওয়া দরকার কিন্তু শালীনতা বর্জিত নয় ।
বেশভাষা যাতে নত্য প্রদর্শনের সময় কোনরূপে ব্যাঘাত বা অসুবিধা না ঘটায়, সেজন্য বেশ আঁট-সাঁট পোষাক ব্যবহার করা দরকার ।

ভরতনাট্যম, কথকলি প্রভৃতি অন্যান্য নৃত্যশৈলীতে যেমন চরিত্রের অনকেলে বেশভযা ও পেসার প্রয়োজন হয় কথক শৈলীতে সেরূপে প্রয়োজন হয় না। কথক নৃত্যশিল্পীরা সাধারণত একই পোষাক ও রূপ সজ্জায়, বালক ও জ্বরা কৃষ্ণ, যশোদা, রাধা বা নায়ক-নায়িকা ভেদ প্রভৃতি সবই প্রদর্শন করেন ভাব-অভিব্যক্তি দ্বারা ! অনেকে আবার স্বল্প বিরতির অবসরে বেশ পরিবর্তন করে নেন।
রূপসজ্জা বা মেক-আপ সম্বন্ধেও সচেতন হতে হবে। যেমন-তেমন ভাবে পাউডার ও রাজ (rouge ) এবং চোখের পাতায় নীল রঙের প্রলেপ দিলেই দেখতে ভালো লাগে না। সেগুলি পরিমিত ভাবে ব্যবহার করা দরকার । মনে রাখতে হবে যে সুন্দর ভাবে বেশভূষা এবং রূপসজ্জা করাও একটা আর্ট। এই কলাও যথেষ্ট শিক্ষা সাপেক্ষ।
আরও দেখুনঃ
